গাজা উপত্যকায় টানা বিমান হামলায় ৪৬ শিশুসহ ১০৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার পর যুদ্ধবিরতি ‘মেনে চলার’ ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইল। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, তারা মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর তত্ত্বাবধানে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি পুনরায় কার্যকর করছে।
ভয়াবহ বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা ১০৪
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাতে গাজার খান ইউনিস, বেইত লাহিয়া, বুরেইজ ও নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরসহ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ব্যাপক বিমান হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, হামলায় ১০৪ জন নিহত হন—যার মধ্যে ৪৬ শিশু ও ২০ নারী রয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২৫০ জনেরও বেশি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিমান হামলার পর শহরের বিভিন্ন জায়গায় আগুন ও ধোঁয়ার বিশাল স্তম্ভ দেখা যায়, একের পর এক বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ-প্রতিআরোপ
ইসরাইলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে এবং এর জবাবে তারা “ডজন ডজন সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তু ও যোদ্ধাদের” ওপর হামলা চালিয়েছে।
অন্যদিকে হামাস বলেছে, তারা চুক্তির শর্ত মেনেই কাজ করছে এবং যুদ্ধবিরতি ভাঙার দায় ইসরাইলের। গোষ্ঠীটির অভিযোগ, ইসরাইল “নতুন আগ্রাসনের অজুহাত তৈরি করছে।”
নেতানিয়াহুর পাল্টা বক্তব্য
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, হামাস জিম্মিদের মরদেহ ফেরত দেওয়ার চুক্তি ভঙ্গ করেছে এবং একজন ইসরাইলি সেনাকে হত্যার দায়ও তাদের। তার ভাষায়, “হামাস যুদ্ধবিরতির সুযোগ নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে—আমরা তার জবাব দেব।”
ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজও বলেন, “আমাদের সেনারা নিহত হয়েছে, তাই পাল্টা প্রতিক্রিয়া প্রয়োজন ছিল।”
মার্কিন প্রতিক্রিয়া
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, একজন ইসরাইলি সেনাকে হত্যার পর ইসরাইলের ‘প্রতিঘাত করা যৌক্তিক’। তবে তিনি দাবি করেন, এতে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঝুঁকির মুখে পড়বে না।
যুক্তরাষ্ট্র, মিশর, কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি ট্রাম্পের ঘোষিত ২০ দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনার অংশ। চুক্তি অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামাসকে জীবিত ও মৃত মিলিয়ে ৪৮ জন ইসরাইলি জিম্মি ফেরত দিতে হবে।
গাজার মানবিক সংকট আরও গভীর
গাজা সিটির বিভিন্ন হাসপাতালে হতাহতদের ভিড় বাড়ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বেশিরভাগ হতাহত বেসামরিক নাগরিক এবং বহু পরিবার পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও বহু মানুষ আটকা আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দীর্ঘ সময় ধরে চলা সংঘাত ও বিমান হামলায় গাজার অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিদ্যুৎ, পানি ও চিকিৎসা সেবার সংকটে মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর হচ্ছে।